ইওয়াই রিপোর্টে সাড়া: বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির মানচিত্রে ভারতের উল্কার মতো উত্থান

আন্তর্জাতিক | ফোরপিলার্সবিডি.কম
প্রকাশিত:
ইওয়াই রিপোর্টে সাড়া: বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির মানচিত্রে ভারতের উল্কার মতো উত্থান

মাত্র ১৩ বছরের মধ্যেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে রূপ নিতে চলেছে ভারত। সমীক্ষক সংস্থার রিপোর্ট ঘিরে ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে শোরগোল।

‘ইওয়াই ইকোনমিক ওয়াচ’-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ১৩ বছরের মধ্যেই ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পৌঁছে যাবে। তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রশাসনিক সংস্কার এবং বিপুল জনসংখ্যার সুফলই হবে ভারতের অর্থনৈতিক উন্নতির প্রধান চালিকা শক্তি। এক্ষেত্রে বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতির আসনে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান টলমল হয়ে উঠতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদেরা।

চলতি বছরের অগস্ট মাসে প্রকাশিত ‘ইওয়াই ইকোনমিক ওয়াচ’-এর রিপোর্টে জানানো হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের অর্থনীতি পৌঁছে যাবে ২০.৭ লক্ষ কোটি ডলারে। আর ২০৩৮ সালে তা আরও বেড়ে দাঁড়াবে ৩৪.২ লক্ষ কোটি ডলারে। বর্তমানে ভারত আর্থিক শক্তির নিরিখে বিশ্বের তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে।

এই আর্থিক উত্থানের পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণের কথা উল্লেখ করেছেন সমীক্ষকরা। প্রথমত, বর্তমানে ভারতের জনগণের গড় বয়স ২৮.৮ বছর। এতে সঞ্চয়ের প্রবণতা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে বিনিয়োগও। ফলে দেশের অর্থনৈতিক সূচক ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, সরকারি ঋণ ও জিডিপির অনুপাত উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৪ সালে এই অনুপাত ছিল ৮১.৩ শতাংশ, যা ২০৩০ সালের মধ্যে কমে ৭৫.৮ শতাংশে নেমে আসবে বলে অনুমান। এই কারণেও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির আসনে বসা ভারতের জন্য সহজ হবে।

‘অগস্ট-২০২৫’ আর্থিক রিপোর্টে ‘ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড’ বা আইএমএফ-এর তথ্য উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ২০২৮ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের বৃদ্ধি হার যদি ৬.৫ শতাংশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২.১ শতাংশে থাকে, তবে ২০৩৮ সালে পিপিপি বা ক্রয়ক্ষমতার নিরিখে আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যাবে ভারত।

‘ইওয়াই ইকোনমিক ওয়াচ’-এর চিফ পলিসি অ্যাডভাইসর ডিকে শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, ‘‘বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতা সত্ত্বেও তরুণ শ্রমশক্তি, শক্তিশালী সঞ্চয় ও বিনিয়োগ এবং ঋণ কমানোর পদক্ষেপ ভারতের বৃদ্ধির গতি বজায় রেখেছে। দেশ আর্থিক দিক থেকে স্থিতিশীল।’’, কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রশংসাও করেছেন তিনি। তাঁর মতে, ২০৪৭ সালের মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’-এর স্বপ্নপূরণ সম্ভব হবে।

বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হলো চিন। তবে চিনের বৃদ্ধির পথে রয়েছে বেশ কিছু বাধা—সেখানে জনগণের গড় বয়স অনেকটাই বেশি এবং ঋণের পরিমাণ জিডিপির ১২০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এ কারণেই উদ্বেগে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

ভারতের উন্নতির অন্যতম ভিত্তি হয়েছে জিএসটি, ইউপিআই চালু করা এবং ‘পিএলআই’ প্রকল্পের মতো পদক্ষেপ। এছাড়া ঋণ কমাতে ‘ইনসলভেন্সি অ্যান্ড ব্যাঙ্করাপ্সি কোড’ কার্যকর হয়েছে। সমীক্ষকরা অনুমান করছেন, ২০২৮ সালের মধ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্থানে উঠবে, জার্মানিকে পিছনে ফেলে।

অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এমনকি নিষেধাজ্ঞার হুমকিও দিয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নীতির প্রভাব ভারতের জিডিপিতে মাত্র ০.৯ শতাংশ হতে পারে, আর সর্বোচ্চ ক্ষতি হলেও তা হবে ০.১ শতাংশ। কারণ ভারত বিকল্প বাজার খুঁজতে শুরু করেছে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারও অত্যন্ত শক্তিশালী।

এই পরিস্থিতিতেই ব্রিটেনের সঙ্গে ‘মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি’ সম্পন্ন করেছে ভারত এবং শীঘ্রই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একইসঙ্গে কানাডা, ব্রাজিল, আফ্রিকার দেশগুলিও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াচ্ছে। রাশিয়াও ভারতের জন্য তেল ক্রয়ে ছাড় দিয়েছে।

এদিকে, ৩১ অগস্ট চীনের তিয়ানজিনে বসছে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার বৈঠক, যেখানে যোগ দিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও থাকবেন। বিশেষভাবে মোদী ও পুতিনকে স্বাগত জানাবেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বৈঠকে রাশিয়া-ভারত-চীন ত্রিশক্তির পুনর্জাগরণের সম্ভাবনা রয়েছে, যা ভারতের অর্থনীতিকেও বাড়তি শক্তি যোগাবে।

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরও খবর

তাইওয়ানে ১৫ জনকে হত্যার পর টাইফুন রাগাসা চীনের দিকে ধেয়ে আসছে।

এ বছর বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় টাইফুন রাগাসা বুধবার দক্ষিণ চীনে আঘাত হানে। এর আগে এটি তাইওয়ানে ১৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এবং ভয়াবহ ঝড়ো হাওয়া ও প্রবল বর্ষণে হংকং বিপর্যস্ত হয়।

তাইওয়ান ও হংকংয়ে প্রভাব

তাইওয়ানের পূর্বাঞ্চলীয় হুয়ালিয়েন কাউন্টিতে এক বাঁধ-হ্রদ উপচে পড়ে পানির ঢল নেমে এলে ১৭ জন নিখোঁজ হয় বলে বুধবার ফায়ার সার্ভিস জানায়। সোমবার থেকে রাগাসার বাইরের অংশ দ্বীপটিকে ভিজিয়ে রেখেছে।
পর্যটনকেন্দ্র গুয়াংফুর বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সাধারণত দ্রুত লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হলেও এবার কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সতর্কতা দেয়নি।
তাইওয়ানে প্রবল বর্ষণের সময় হংকংয়ে সমুদ্রতীরে বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ে, যা রাস্তা ও ঘরবাড়ি প্লাবিত করে।

চীনে আঘাত

চীনের মেরিন কর্তৃপক্ষ এ বছর প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ লাল সতর্কতা জারি করে, গুয়াংডং প্রদেশে ২.৮ মিটার পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা জানায়।
রাগাসা পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে গত সপ্তাহে সৃষ্টি হয় এবং উষ্ণ সমুদ্র ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে সোমবার ক্যাটাগরি–৫ সুপার টাইফুনে রূপ নেয়, যার বাতাসের গতি ঘণ্টায় ২৬০ কিমি ছাড়ায়। বর্তমানে এটি দুর্বল হয়ে ক্যাটাগরি–৩ এ নেমে এসেছে, তবুও গাছ উপড়ে ফেলা, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ফেলা, জানালা চূর্ণ করা ও ভবন ক্ষতিগ্রস্ত করার মতো শক্তি রয়ে গেছে।
চিম লি, ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ বলেন, “পার্ল রিভার ডেল্টা টাইফুনের জন্য সবচেয়ে প্রস্তুত অঞ্চলগুলোর একটি। তাই বড় ধরনের বিপর্যয় আশা করা হচ্ছে না।”

তবে বুধবার হংকংয়ে জিজিন গোল্ড ইন্টারন্যাশনাল ৩.২ বিলিয়ন ডলারের আইপিও স্থগিত করে।
এরপর রাগাসা হংকংয়ের প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ দিয়ে অতিক্রম করে চীনের দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানে। ঝড়ের পথে থাকা গুয়াংঝু, শেনঝেন, ফোশান ও দোংগুয়ানের মতো শহরে প্রায় ৫ কোটি মানুষ বসবাস করে।

ব্যাপক সরিয়ে নেওয়া ও ত্রাণ

চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার গুয়াংডংয়ে হাজার হাজার তাঁবু, ভাঁজ খাট, জরুরি আলোকসামগ্রীসহ উদ্ধার সামগ্রী পাঠায়। ইতিমধ্যে ৭ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কিছু দোকানপাট ও রেস্তোরাঁ বড় ভাড়া করা ট্রাক সামনে পার্ক করে ঝড়ের ক্ষতি ঠেকানোর চেষ্টা করে।
শেনঝেনের এক বাসিন্দা লিয়াং বলেন, “আমরা ওপরের তলায় থাকি, তাই ঝুঁকি কম মনে হয়েছে। বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়েছি ঝড়-বৃষ্টি উপভোগ করতে।”
শেনঝেন বে ব্রিজের নিচে ঝড় দেখার জন্য জড়ো হওয়া ভিড়কে পুলিশ সরিয়ে দেয়।

চীনের মেরিন কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে, শেনঝেনে বিশেষ করে নিচু এলাকায় প্লাবনের ঝুঁকি রয়েছে এবং বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঝড়ের সতর্কতা জারি থাকতে পারে।

হংকং ও ম্যাকাও পরিস্থিতি

মঙ্গলবার হংকংয়ের সমুদ্রতীরে ঝড় দেখতে গিয়ে এক নারী ও তার পাঁচ বছর বয়সী ছেলে সমুদ্রে ভেসে যায়। বর্তমানে তারা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রয়েছে।
বুধবার সকালে শহরের টাইফুন সতর্কতা ১০ থেকে কমিয়ে ৮ করা হলেও শহর কার্যত অচলাবস্থায় থাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে এবং সরকার খোলা ৫০টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ৭৯১ জন আশ্রয় নেয়।
ম্যাকাওয়ে ক্যাসিনোগুলোকে কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওতে দেখা গেছে, ঝড়ো হাওয়া ও উড়ন্ত বস্তু থেকে রক্ষা পেতে ক্যাসিনো রিসোর্টগুলোর দরজা সিল করে দেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘে আক্রমণাত্মক ভাষণের সময় ট্রাম্প বিশ্বনেতাদের বলেন, তাদের দেশগুলো “নরকে যাচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এক আক্রমণাত্মক ও বিস্তৃত ভাষণে বৈশ্বিক অভিবাসন কমানোর পক্ষে যুক্তি দেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন নীতি থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। তিনি বিশ্বনেতাদের তীব্র সমালোচনা করেন।

৫৬ মিনিটের এই ভাষণ ছিল জাতিসংঘের প্রতি একপ্রকার ভর্ৎসনা এবং ট্রাম্পের আগের ধাঁচে ফেরা, যিনি তার প্রথম মেয়াদে নিয়মিত জাতিসংঘকে আক্রমণ করতেন। তিনি চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলে নেতারা তাকে ভদ্রতাপূর্ণ করতালি দেন। ট্রাম্প ইসরায়েলের গাজা হামলার প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার মিত্রদের প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে চাপ সৃষ্টি করতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তার প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক পদক্ষেপগুলো গ্রহণে ইউরোপীয় দেশগুলোকে উৎসাহিত করেন।

তার বক্তৃতার বড় অংশ জুড়েই ছিল তার দুই বড় অভিযোগ: অভিবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তন।

ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন দমন নীতি তুলে ধরে বলেন, অন্যান্য বিশ্বনেতাদেরও ভ massূ অভিবাসন রোধে একই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যা তার মতে জাতিগুলোর মূল কাঠামোকে পরিবর্তন করছে। তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলেন, অভিবাসীরা কেবল ভালো জীবনের সন্ধানেই আসছে।

ট্রাম্প বলেন: “আমি এসব ব্যাপারে ভীষণ দক্ষ। আপনাদের দেশগুলো নরকে যাচ্ছে।”

ব্রিটেনের পরিবেশবান্ধব রাজা চার্লসের সঙ্গে উইন্ডসর ক্যাসেলে বৈঠকের এক সপ্তাহ পরই ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনকে “প্রতারণা” আখ্যা দিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হওয়ার আহ্বান জানান। বিজ্ঞানীরা অবশ্য বলেন, মানুষের কারণেই জলবায়ু পরিবর্তন বাস্তবতা।

ট্রাম্প বলেন: “অভিবাসন আর তাদের আত্মঘাতী জ্বালানি ধারণাই পশ্চিম ইউরোপের সর্বনাশ ডেকে আনবে।”

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসন চলতি মাসের শেষে জাতিসংঘে আশ্রয়ের অধিকারের ব্যাপক সীমাবদ্ধতার আহ্বান জানাতে চায়, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী মানবিক সুরক্ষা কাঠামো ভেঙে দেওয়ার প্রচেষ্টা।

তার বক্তৃতায় ট্রাম্প একগুচ্ছ ভ্রান্ত ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্যও রাখেন। যেমন— তিনি দাবি করেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান শহরে “শরিয়া আইন” চাপিয়ে দিতে চান, এবং যুক্তরাষ্ট্রে “মুদ্রাস্ফীতি পরাজিত হয়েছে”, যদিও মাত্র ছয় দিন আগে ফেডারেল রিজার্ভ বলেছে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প যুগের শুল্ক অবৈধ: বৈশ্বিক বাণিজ্যে নতুন অনিশ্চয়তার ছায়া

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের আপিল আদালত সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত অধিকাংশ শুল্ককে অবৈধ ঘোষণা করেছে। যদিও এই রায় কার্যকর হতে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লাগবে, ইতিমধ্যেই দেশীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে নানা প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। নিচে বিষয়টি বিশ্লেষণধর্মীভাবে উপস্থাপন করা হলো—


১. যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি

  • ট্রাম্পের শুল্কনীতি তার আমলের অন্যতম বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ছিল। উদ্দেশ্য ছিল চীনের মতো দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেয়া।

  • বাইডেন প্রশাসন শুরুতে কিছু শুল্ক বহাল রাখলেও আদালতের এই রায়ে তারা রাজনৈতিক চাপে পড়বে। কারণ শুল্ক তুলে দিলে ভোক্তারা স্বস্তি পেলেও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতির আশঙ্কা করছে।

  • রায়কে ঘিরে আসন্ন নির্বাচনে বাণিজ্যনীতি আবারো বড় আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠতে পারে।


২. ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব

  • আমদানিকারক ও ভোক্তা: শুল্ক অবৈধ হলে পণ্যের দাম কমতে পারে, বিশেষ করে ইলেকট্রনিকস, যন্ত্রপাতি এবং ভোক্তা সামগ্রীতে। এতে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবে।

  • স্থানীয় শিল্প: বিদেশি পণ্যের দাম কমলে দেশীয় উৎপাদনকারীরা প্রতিযোগিতার চাপে পড়বে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

  • বিনিয়োগকারী: বাজারে অনিশ্চয়তা বেড়েছে। বিনিয়োগকারীরা এখন অপেক্ষা করছেন, অক্টোবরের পর কী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।


৩. বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া

  • চীন ও এশিয়ার বাজার: শুল্ক কমলে চীনা পণ্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজার আবারো উন্মুক্ত হতে পারে। এতে এশিয়ার দেশগুলো উপকৃত হবে।

  • ইউরোপ ও অন্যান্য দেশ: আমদানি শুল্কের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় ইউরোপীয় দেশগুলোও তাদের কৌশল বদলাতে পারে।

  • বৈশ্বিক অর্থনীতি: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রবাহ বেড়ে যেতে পারে, তবে যুক্তরাষ্ট্র যদি হঠাৎ নীতি পরিবর্তন করে, বাজারে ধাক্কা লাগতে পারে।


৪. ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা

  • অক্টোবরের পর শুল্ক বহাল থাকবে কি না, তা আদালতের চূড়ান্ত রায় ও বাইডেন প্রশাসনের পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করবে।

  • যদি শুল্ক পুরোপুরি তুলে নেয়া হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার আরও উন্মুক্ত হবে। কিন্তু প্রশাসন যদি জাতীয় স্বার্থের কথা বলে লড়াই চালিয়ে যায়, তাহলে বাণিজ্যিক উত্তেজনা আবারও বাড়তে পারে।


 

এই শুল্ক রায় শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি নয়, বরং বৈশ্বিক বাণিজ্যের গতিপথেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। ভোক্তাদের স্বার্থ, শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক—সবকিছুই এখন এই রায় ও এর বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে। আগামী কয়েক মাস হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মধ্যেই নির্ধারণ হবে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাণিজ্যনীতির এই জটিল সমীকরণ সামাল দেবে।

ভারতের পার্সেলে দিতে হবে সর্বোচ্চ দাম, আমেরিকায় প্যাকেজে শুল্কছাড় শেষ, ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া সিদ্ধান্ত

এত দিন আমেরিকা প্যাকেজ লেনদেনের ক্ষেত্রে যে শুল্কছাড় দিত, তা তুলে নেওয়া হল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে আর কোনও প্যাকেজ লেনদেনে শুল্কছাড় প্রযোজ্য থাকবে না।

৮০০ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৭০,২৪৩ টাকা) বা তার কম মূল্যের প্যাকেজ লেনদেনের ক্ষেত্রেও এত দিন যে সুবিধা ছিল, তা আর থাকবে না। এখন থেকে আমেরিকায় কোনও পার্সেল পাঠাতে হলে স্বাভাবিক শুল্ক দিতে হবে। অর্থাৎ, পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে যে দেশের উপরে যত শুল্ক আরোপিত হয়েছে, পার্সেল বা প্যাকেজের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম কার্যকর হবে। যে কোনও দামের পার্সেলের ক্ষেত্রেই এই নিয়ম চালু হবে। তবে আগামী ছ’মাসের জন্য পার্সেল প্রেরকদের বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রেখেছে ওয়াশিংটন।

ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী, প্রেরকেরা চাইলে আগামী ছ’মাস সরাসরি বাড়তি অর্থ দিয়ে পার্সেল পাঠাতে পারবেন। তবে এই বাড়তি অর্থ দেশভেদে আলাদা। এক-একটি পার্সেলের জন্য ৮০ ডলার (৭,০২৪ টাকা) থেকে সর্বোচ্চ ২০০ ডলার (১৭,৫৬১ টাকা) পর্যন্ত গুনতে হবে। মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন এজেন্সি (সিবিপি) জানিয়েছে, যেসব দেশের উপর মার্কিন রফতানি শুল্ক ১৬ শতাংশ বা তার কম, তাদের ক্ষেত্রে বাড়তি ৮০ ডলার দিলেই চলবে। এই তালিকায় রয়েছে ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশ। যেসব দেশের উপর শুল্কহার ১৬ থেকে ২৫ শতাংশ, তাদের প্রতিটি পার্সেলের জন্য বাড়তি ১৬০ ডলার (১৪,০৪৯ টাকা) দিতে হবে। এই তালিকায় ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম রয়েছে। আর যেসব দেশের উপর ২৫ শতাংশ বা তার বেশি শুল্ক আরোপিত—যেমন চিন, ভারত, ব্রাজিল, কানাডা—তাদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০০ ডলার শুল্ক গুনতে হবে। তবে এই নিয়ম কেবল ছ’মাসের জন্য, তার পর থেকে সব দেশের পার্সেলের জন্য স্বাভাবিক রফতানি শুল্কই কার্যকর হবে।

আমেরিকার বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো জানিয়েছেন, পার্সেল লেনদেনে শুল্কছাড় তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থায়ী। ভবিষ্যতে কোনও পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। তাঁর দাবি, এত দিন শুল্কছাড়ের সুযোগ নিয়ে আমেরিকায় নিষিদ্ধ মাদক এবং বিপজ্জনক সামগ্রী প্রবেশ করত। এই সিদ্ধান্তে তা বন্ধ হবে। তিনি বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে আমেরিকানরা উপকৃত হবেন। নিষিদ্ধ ও বিপজ্জনক জিনিসপত্র আর অবাধে ঢুকতে পারবে না। একই সঙ্গে এই পদক্ষেপ থেকে বছরে এক হাজার কোটি ডলার অতিরিক্ত রাজস্ব আসবে। এটি একটি স্থায়ী পরিবর্তন।’’

অভিযোগ ছিল, পার্সেলে শুল্কছাড় থাকায় অনেক দেশ রফতানি শুল্ক এড়ানোর পথ হিসেবে এটি ব্যবহার করত। সাধারণ রফতানিতে শুল্ক দিতে হলেও সরাসরি পার্সেলের মাধ্যমে গ্রাহকের হাতে পণ্য পৌঁছে দিয়ে সেই শুল্ক এড়ানো সম্ভব হত। চিন-সহ একাধিক দেশ এভাবেই আমেরিকায় পণ্য পাঠাত। এই ‘ফাঁক’ নিয়ে আমেরিকায় দীর্ঘ দিন আলোচনা চলছিল এবং বিরোধিতাও হচ্ছিল। উপরন্তু, পার্সেলের ক্ষেত্রে নজরদারি তুলনামূলক কম থাকায় নিষিদ্ধ সামগ্রীও প্রবেশ করত। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপে সেই পথ বন্ধ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।